দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক বেহিসেবি খরচ করে থাকি। আজ আমরা জানব।
এই খরচ কমানোর উপায় কি ? কারণ এটা জানা আমাদের সকলের দরকার।
আমরা যদি এখন থেকেই এই খরচের লাগাম না ধরি। তাহলে ভবিষ্যতের জন্য আমরা কিছুই সঞ্চয় করতে পারবো না।
আমাদের আয় বাড়ার সাথে সাথে ব্যয় বাড়তেই থাকে। কিছুতেই আমরা তখন ব্যয় কমাতে পারিনা।
কিন্তু আমরা যদি কিছু নিয়ম মেনে চলি। তাহলে আমাদের জীবনে খরচ কমানো সম্ভব। আমাদের খরচ বাড়ার সাথে আমাদের কিছু ভুল দায়ী। যেভুল গুলিকে আগে শুধরানো দরকার।
আর আমাদের উচিত সঠিক নিয়মে নিজেরদের জীবনকে অতিবাহিত করা। আমরা এই ব্লগে জানব। কেন আমাদের এত বেহিসেবি খরচ হয়। আর এর প্রতিকার কি।
আমরা মূলত নানা কারণে বাজে খরচ করি। এর মধ্যে কিছু কিছু বিষয় আছে যা আমাদের বেজে খরচের দিকে ঠেলে দেয়। তাই আগে জানতে হবে। এই বাজে খরচ কেন আমরা করি। আমরা যে কারণে বাজে খরচ করি। তা হল-
১) ভবিষ্যতে টাকা জমানোর কথা ভুলে যাই।
২) নিজেকে অনেক ধনী দেখানোর প্রচেষ্টা।
৩) আমাদের কিছু বাজে অভ্যাস ছাড়তে না পারা।
৪) আমাদের মনের অজান্তে কিছু ভুল
১) ভবিষ্যতে টাকা জমানোর কথা ভুলে যাই
আমরা যতই ইনকাম করি না কেন।
আমরা কখনোই ভবিষয্যতের কথা চিন্তা করিনা। এই যেমন ধরুন। যারা চাকরি করে, তার মাসের প্রথম দিকে অনেক বেশি খরচ করে ফেলে।
এখানে প্রয়োজনের সাথে অপ্র্যোজনীয় অনেক খরচ থাকে। তখন দেখা যায় মাস শেষে আমাদের সংসারে টানাপোড়ন চলে।
আবার অনেক সময় ধার কর্য করতে হয়। তাই বাজে খরচ করার অন্যতম কারণ হল আমরা ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করিনা।
কিন্তু আমাদের উচিত ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করা।
যারা চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা বা অন্যভাবে টাকা আয় করেন।
তাদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে। তারা হাতে টাকা পাবার পর অনেক খরচ করতে উৎসাহিত হয়ে যান। যেটা দরকার নেই।
অনেক সময় সেটাও কিনে ফেলি। এই অভ্যাস থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে।
২) নিজেকে ধনী দেখানোর চেষ্টা
আমরা অনেকেই নিজেকে ধনী দেখিয়ে খুব আনন্দ পাই।
আমাদের সামর্থ্য আছে ৫ টাকা। আর দেখাতে যাই ১০ টাকা।
কিন্তু এটা মোটেও ঠিক না। এভাবে কখনোই সুখ আসেনা। আপনার বন্ধুর হয়তো বাইক আছে। তাই আপনাকে দেখাতে হবে।
আপনার বাইক কেনার সামর্থ্য আছে। আর তখন আপনি লোন নিয়ে বাইক কিনলেন।
এতে করে কিন্তু আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হলেন। আপনার বাইক ছাড়া কিন্তু আরামে সংসার চলছিল।
কিন্তু আপনাকে ধনী দেখানোর জন্য এখন প্রতি মাসে টানা পোড়নে পড়তে হচ্ছে। এভাবে অনেকেই আছেন।
যারা অন্যের জামা, অলংকার ইত্যাদি দেখে তা নিজের জন্যেও কিনছেন।
তা যত দামই হোক। আবার অনেকেই আছেন ভাল সামাজিক জীবন।
ভাল সোসাইটিরতে থাকবে দেখানোর জন্য। তাদের সাথে মিল রেখে খাওয়া দাওয়া, বাচ্চার পড়াশুনা ইত্যাদিতে খরচ করতে করছেন।
কিন্তু দিনশেষে কিন্তু আপনারই চাপ পড়ছে। ভবিষ্যতের জন্য তো কিছু সঞ্চয় হচ্ছেই।
বরং নিজের সাথে নিজেকেই ধোকা দেওয়া হচ্ছে।
৩) আমাদের কিছু বাজে অভ্যাস ছাড়তে না পারা
আমরা অনেকেই আমাদের নিজেদের কিছু বাজে অভ্যাসের জন্য প্রচুর খরচ বাড়িয়ে ফেলি।
এই অভ্যাসগুলি দিন দিন আমাদের খরচ অনেক বাড়িয়ে দেয়।
আমরা যারা ধুমপান করি। এতে করে আমাদের যেমন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
ঠিক তেমনি এতে আমাদের প্রতি মাসে একটা মোটা অংকের টাকা অহেতুক খরচ হয়।
অথচ এই খরচটি আমরা অন্য কাজেও লাগাতে পারতাম। অনেকে আবার বাইরের খাবার বা রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়ার বাজে অভ্যাস রয়েছে।
এই অভ্যাসগুলিও আমাদের জীবনের খরচ বাড়িয়ে দেয়।
এই রকম আরো নানা রকম বাজে অভ্যাস আছে। যেগুলো ছাড়তে না পারার জন্য আমাদের খরচ অনেক বেড়ে যায়
৪) আমাদের মনের অজান্তে কিছু ভুল
আমরা মনের অজান্তেই অনেক সময় অনেক খরচ করে ফেলি।
এই যেমন আমরা একটা জামা কিনতে যেয়ে দুইটা জামা কিনে ফেলি।
অথচ এই খরচ করাটা আমাদের হয়তো দরকার ছিলনা।
আবার বাজারে কিছু কিনতে গেলে। কিছু অপ্রয়োনীয় জিনিস মূল্য ছাড় বা অফার দেখে কিনে নিয়ে আসি।
অথচ এই জিনিসটা কিন্তু আমাদের প্রয়োজন ছিলনা। এভাবে আমরা মনের অজান্তেই বাজে খরচ করে ফেলি।
বাজে খরচ কমানোর উপায়
আমাদের জীবনে যেমন অনেক বাজে খরচ আছে।
ঠিক তেমনি বাজে খরচ কমানোর জন্য অনেক উপায়ও আছে।
আপনারা একে একে এই উপায়গুলি দেখেন ও নিজেদের জীবনে প্রয়োগ ঘটান।
দেখবেন আপনার জীবনে বা সংসারে অনেক অপ্রয়োজনীয় খরচ কমে আসছে।
১) কিছু কেনার আগে মার্কেট যাচাই
আপনি কিছু কেনার আগে হুট করে কিনে ফেলবেন না। এতে করে আপনার ঠকার সম্ভাবনা আছে। তাই কিছু কেনার আগে অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখতে সেটার দাম অনলাইনের বিভিন্ন জায়গায় কত।
এরপর সেটা থেকে আপনি একটা ধারণা পাবেন। এছাড়া আপনি মার্কেট থেকে কিছু কেনার আগে।
৪ থেকে ৫ টা দোকান থেকে দাম জেনে নিন। এরপর কিনুন।
নতুবা দেখা যাবে কোন দোকানদার আপনার কাছে অনেক বেশি দাম চেয়ে বসল।
আর আপনি সেই টাকা দিয়েই সেটা কিনলেন। এভাবে আপনার খরচ বেড়ে গেল।
এভাবে খরচ বাড়তে বাড়তে মাস শেষে অনেক খরচ বেড়ে যাবে।
এই উপায়টি আপনার জানা থাকলে। আপনার কখনোই খরচ বাড়বে না।
২) পুরো মাসের বাজার একসাথে করা – খরচ কমানোর উপায়
আপনি একসাথে পুরো মাসের বাজার একদিনেই করুন।
এতে করে আপনার যাতায়াতের খরচ একদিনেই হয়ে যাবে।
আবার একসাথে অনেক জিনিস কেনার কারণে আপনি অনেক ডিসকাউন্ট পেতে পারেন।
এতে আপনার খরচ অনেক কমবে।
আর আপনি যদি কয়েক দিন পর পর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে থাকেন।
এতে করে আপনি আর ডিস্কাউন্ট পাবেন না। আবার আপনার যাতায়াতের খরচ বার বার লাগবে।
৩) নিজের বদ অভ্যাস ত্যাগ করুন
আপনার যদি ধূমপান করার অভ্যাস থাকে। তাহলে তা ত্যাগ করুন। এতে করে আপনার স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে।
আবার আপনার পূরো মাসের ধুমপানের খরচ বেঁচে যাবে। এছাড়া বাইরে খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করুন।
এছাড়া একটা জিনিস কিনতে গিয়ে কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার প্রবনতা কমান। কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন। আপনি যেটা কিনছেন। সেটা কি আপনার আদৌ দরকার। এই উপায়টি আপনার জীবনে প্রয়োগ করুন।
৪) অপচয় রোধ করুন
আপনি বিদ্যুত, পানি, গ্যাস ইত্যাদির অপচয় রোধ করুন। ঘরে না থাকলে ফ্যান বন্ধ রাখুন। এসি থাকলে তা প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করুন।
এলইডি লাইট ব্যবহার করুন। গ্যাসের চুলাতে যেন নীল আগুন জ্বলে।
সেই ব্যবস্থা করুন। চুলার আগুন লাল,কমলা হলে। চুলা পরিষ্কার করুন। পানির ট্যাংকি ভর্তি হবার আগেই সুইচ বন্ধ করুন।
এভাবে অল্প অল্প করে সব কিছু সাশ্রয় করলে মাস শেষে অনেক টাকা সেভ করতে পারবেন। আপনার খরচ কমে আসবে।
৫) জীবন যাপনে পরিবর্তন – খরচ কমানোর উপায়
আপনার অফিস, কলেজম স্কুল বা অন্য কোন গন্তব্যস্থান কাছে হলে। রিকশা, বাইক ইত্যাদি ব্যবহার বন্ধ করুন। আপনি সেখানে হেঁটেই যান।
এতে আপনার এক্সট্রা টাকা বাঁচবে। এছাড়া খাবারের সময় তেল ও মসলা কম খান। এতে করে আপনার স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে।
আবার আপনার খরচ বেঁচে যাবে। এছাড়া কোন কিছু কিনতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বন্ধ করুন।
যেহেতু ক্রেডিট কার্ডের বিল মাস শেষে দিতে হয়। তাই ক্রেডিট কার্ডে বিল দিতে যেয়ে আমরা অনেক বেশি খরচ করে ফেলি।
আর নিজেকে ধনী দেখাতে যেয়ে অতিরিক্ত খরচ থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন। এটা নিজেকে ধনী দেখানোর কিছু নেই।
আপনি আপনার কর্ম দিয়ে অন্যের কাছে হতে পারবেন। চাকচিক্য দিয়ে নয়। তাই এই উপায়টি এখন থেকেই রপ্ত করুন।
৬) খরচের বাজেট করুন – খরচ কমানোর উপায়
আপনার পুরো মাসের খরচের একটা বাজেট করুন। প্রতিটা খরচের একটা হিসাব করুন। কোন জিনিসে খরচ বেশি হল তার তালিকা করুন। এরপর পরের মাস থেকে আপনি বুঝতে পারবেন।
কোথায় কোথায় খরচ কমাতে হবে। আপনি এই হিসাবের কাজ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে করতে পারেন। এভাবে আপনি আপনার খরচ কমিয়ে নিতে পারবেন।
অ্যাপ লিংক- হিসাব রাখার খাতা
৭) ভ্রমণ ব্যয় কমান – খরচ কমানোর উপায়
অনেকেই দেখা যায়। মাসে ৩ থেকে ৪ দূরে কথাও ঘুরতে যান। তারা মনে করেন ঘুরতে গেলেই বুঝি মন ভাল হয়ে যাবে। এটাও এক ধরনের বদ অভ্যাস। আপনি অন্য কিছু করেও মন ভাল করতে পারেন।
এভাবে টাকা অপচয়ের কিছু নেই। আপনই দূরে কোথাও ঘুরতে যেতেই পারেন।
তা বছরে ১ বা ২ বার হলেই ভাল। কারণ এই ঘোড়াঘুরিতে অনেক টাকা ও সময়ের অপচয় হয়। তাই আপনি আপনার ভ্রমণ ব্যয় কমান।
৮) ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমান
এটা খুব বাজে একটা দিক। আপনি যত ঋণ করবেন। আপনার খরচ বাড়তেই থাকবে। এই প্রবণতা আপনাকে খরচ করতে উৎসাহিত করে।
আবার ঋণ পরিশোধ করতে যেয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। ঋণ করে বিলাসী জীবনের চেয়ে ঋণ না করে সাধারণ জীবনে বেঁচে থাকাটা বেশি আনন্দদায়ক ও শান্তির।
- ঋণ না করার পাশাপাশি সঞ্চয়ী হোন।
প্রতি মাসে আপনার ইনকামের কমপক্ষে ১০% টাকা সেভ করুন।
এতে আপনারই ভবিষ্যিতে তা কাজে লাগবে। আপনার ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হবেনা।
শেষ কথা – খরচ কমানোর উপায়
উপরের সবগুলো উপায় আপনার জীবনে প্রয়োগ করুন। আপনি একসাথে না পারলেও ধীরে ধীরে প্রয়োগ করুন।
আপনার ইমোশনকে কন্ট্রোল করুন। আর বাজে অভ্যাসগুলি জীবন থেকে ঝেরে ফেলুন।
মিথ্যা সামাজিকতা রক্ষায় বেহিসেবি খরচ বন্ধ করুন। আশা করি এই খরচ কমানোর উপায় গুলি আপনার জীবনকে অনেক সুন্দর করবে।
আর আপনার টাকা বাজে খরচ হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরো পোস্ট