বাংলাতে আর্টিকেল লিখে আয় করার জন্য কিওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায় জানা জরুরী। কেননা আপনি যদি সঠিকভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ না করে থাকেন, তাহলে আপনার ব্লগ বা আর্টিকেলটি গুগলে র্যাংক করতে সমস্যার সম্মুখীন হয়।
এছাড়া আপনি সঠিকভাবে কিওয়ার্ড রিসার্স না করে থাকলে, আপনার আর্টিকেলে পর্যাপ্ত ভিজিটর থেকে বঞ্চিত হবেন।
যার ফলে বলা যায়, কিওয়ার্ড রিসার্চ একটি গুরত্বপূর্ণ এসইও ফ্যাক্ট হিসেবে কাজ করে। এই আর্টিকেলে আমরা শিখব, কিভাবে সঠিক উপায়ে কিওয়ার্ড রিসার্চ করে কিওয়ার্ড বের করতে হয়।
আর সেই কিওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করে কিভাবে আর্টিকেল লিখতে হয়।
কিওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায় জানার আগে আমাদের জানতে হবে কিওয়ার্ড কি? আমরা কোন কিছু জানার জন্য ওয়েব সার্চ বারে যা কিছু লিখে সার্চ করি বা খুঁজি, তাকেই কিওয়ার্ড বলে।
এই কিওয়ার্ডগুলি দিয়ে আমরা সাধারণত গুগল সার্চ বারে কোন কিছু জানার জন্য, কোন কিছু কেনার জন্য বা কোন সার্ভিসের জন্য খুঁজে থাকি।
যেমন আমাদের যদি কোন মোবাইল কেনার প্রয়োজন হয়, তখন আমরা গুগলে সার্চ করি, ‘সেরা মোবাইল ২০২৪’ বা ‘১৫ থেকে ২০ হাজার তাকা বাজেটের সেরা ফোন’ ইত্যাদি লিখে।
তখন গুগল থেকে আমরা অনেক ফলাফল দেখতে পাই বা অনেকগুলি সার্চ রেজাল্ট দেখতে পাই।
এখন গুগলে কি লিখলে সহজেই মানুষ তার প্রয়োজনীয় ফলাফলটি খুঁজে পাবে, সেটা নিয়ে রিসার্চ করারকেই কিওয়ার্ড রিসার্চ বলে।
যেমনঃ আপনি ‘সেরা ফোন ২০২৪’ নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখতে চান। তাহলে আপনাকে সবার আগে সেই আর্টিকেলের কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনাকে আর্টিকেলটি লেখার জন্য এমন কিওয়ার্ড খুঁজে বের করতে হবে, যে কিওয়ার্ডে লিখে মানুষ অনেক বেশি গুগলে সার্চ করে।
আর সহজেই যেন আপনার আর্টিকেলটি মানুষ গুগলে খুঁজে পায়। এই কাজ করার জন্য আপনাকে কিওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায় জানতে হবে। নিচে থেকে দেখে নিন, কিভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হয়।
কিওয়ার্ড রিসার্চ কেন গুরত্বপূর্ণ
আপনি অনেক কষ্ট করে অনেক বড় ও হাই কোয়ালিটি একটি ব্লগ বা আর্টিকেল লিখলেন। কিন্তু আপনি আর্টিকেলটি সঠিভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ না করেই লিখলেন।
এতে সেই আর্টিকেলটি গুগলের সার্চে দেখালো না। আর আপনি আপনার কাঙ্খিত ভিজিটর থেকে বঞ্চিত হলেন।
এতে করে আপনার সকল পরিশ্রম পন্ড হয়ে গেল। তাই ব্লগ বা আর্টিকেল লেখার ক্ষেত্রে কিওয়ার্ড রিসার্চ করা অনেক জরুরী।
এছাড়া আপনি সঠিকভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চের অভাবে টার্গেটেড কাস্টমার বা ভিজিটর থকে বঞ্চিত হবেন।
আর্টিকেল লিখে ইনকাম করার জন্য সঠিকভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে এই ভিডিওটি দেখুন।
Keyword এর ধরন
কিওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায় জানার আগে আমাদের জানতে হবে, বিভিন্ন কিওয়ার্ডের ধরন বা প্রকারভেদ সম্পর্কে।
একটি ব্লগ বা আর্টিকেলে লেখার জন্য ৩ ধরনের কিওয়ার্ড হয়ে থাকে। সেগুলি হল-
- ফোকাস কিওয়ার্ড
- লং টেইল কিওয়ার্ড
- কিওয়ার্ড ইনটেন্ট
(১) ফোকাস কিওয়ার্ড
একটি আর্টিকেলের ফোকাস কিওয়ার্ড সবথেকে গুরত্বপূর্ণ। এই কিওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করেই মূলত একটি ব্লগ লিখতে হয়।
ফোকাস কিওয়ার্ড খুব বেশি বড় হয়না। এই কিওয়ার্ড দিয়ে মানুষ সবথেকে বেশি সার্চ করে থাকে।
ফোকাস কিওয়ার্ডের কম্পিটিশন অনেক বেশি হয়। তবে ফোকাস কিওয়ার্ডস অনেক বুঝে নির্বাচন করতে হবে।
কেননা ফোকাস কিওয়ার্ড র্যাংক করা কঠিন। কিন্তু এটিই বেশি গুগলে র্যাংক করে। এই কিওয়ার্ড সাধারণত সাইজে ছোট হয়।
উদারহরণঃ ‘কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে আয় করা যায়’, এই ব্লগে ফোকাস কিওয়ার্ড হলঃ ডিজিটাল মার্কেটিং।
(২) লং টেইল কিওয়ার্ড
একটি ফোকাস কিওয়ার্ড বা রিলেটেড কিওয়ার্ডের আগে ও পরে কিছু শব্দ যুক্ত করে লেখাকে লং টেইল কিওয়ার্ড বলে।
লং টেইল কিওয়ার্ডের সার্চ খুব কম পড়ে। তবে এই কিওয়ার্ডের কম্পিটিশন অনেক কম হয়। যার ফলে এই কিওয়ার্ড সহজেই র্যাংক করে।
যদি আপনার ফোকাস কিওয়ার্ড হয়- ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’। তাহলে এর লং টেইল কিওয়ার্ড হবে- ইকমার্স ওয়েবসাইটের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং।
(৩) কিওয়ার্ড ইনটেন্ট
একজন ইউজার যে বিভিন্ন রকমের কিওয়ার্ড লিখে গুগলে সার্চ করে, তাকে কিওয়ার্ড ইনটেন্ট হলে। কিওয়ার্ড ইনটেন্ট অনুযায়ী কিওয়ার্ডগুলি হয়, ৪ ধরনের। সেগুলি হল
১. ইনফরমেশনালঃ যে কিওয়ার্ডের মাধ্যমে কোন তথ্য পাওয়া যায়। তাকে ইনফরমেশনাল কিওয়ার্ড বলে। যেমনঃ ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’।
২. নেভিগেশনালঃ যে কিওয়ার্ডে সরাসরি কোন ওয়েবসাইটের নাম লিখে সার্চ করা হয়, তাকে নেভিগেশনাল কিওয়ার্ড বলে। যেমনঃ Asprivate, Facebook ইত্যাদি।
৩. ট্রাঞ্জাকশনালঃ যে কিওয়ার্ডের মাধ্যমে কোন কিছুর দাম জানা যায়, তাকে ট্রাঞ্জাকশনাল কিওয়ার্ড বলে। যেমনঃ ‘olevs হাত ঘড়ির দাম’
৪. কমার্শিয়ালঃ যে কিওয়ার্ডের মাধ্যমে একজন মানুষ কোন কিছু কিনতে চায়, তাই সে পন্যের বিষয়ে জানতে চায় তাকে কমার্শিয়াল কিওয়ার্ড বলে। যেমনঃ ‘সেরা ওয়াশিং মেশিন ২০২৪’
আর্টিকেলের কিওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায়
একটি আর্টিকেলে যেভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হয়, তা দেখুন।
১. চিন্তা করাঃ
আপনি কোন বিষয়ের উপর লিখতে চান, তা নিয়ে প্রথমে চিন্তা করতে হবে। যে বিষয় নিয়ে আপনি লিখবেন তা নিয়ে প্রথমে আপনাকে গবেষণা করতে করতে হবে।
ধরুন আপনি লিখতে চাচ্ছেন, ‘কিভাবে চুলের যত্ন নিতে হয়’ এই ব্যাপারে। তাহলে আপনাকে প্রথমে এই বিষয়টি নিয়ে ওয়েবসাইটে ও ইউটিউব ভিডিওতে সার্চ করতে হবে।
আপনাকে দেখতে হবে অন্য ওয়েবসাইটে কিভাবে এই নিয়ে ব্লগ লিখেছে। এরপর আপনাকে দেখতে হবে যে, আপনি যে বিষয়ের উপর ব্লগ লিখতে চাচ্ছেন। সেই বিষয়ে মানুষের ইন্টারেস্ট আছে কিনা।
সেই কিওয়ার্ডের সার্চ ভিলিউম কেমন। আর এই কিওয়ার্ডের কম্পিটিশন কেমন এই ব্যাপারে অ্যানালাইসিস করে নিতে হবে।
আর এই অ্যানালাইসিস গুলি আপনি বিভিন্ন ফ্রি টুলসের মাধ্যমে করতে পারবেন। ফ্রি টুলস গুলি হলঃ Google Keyword planner, Free keyword generator by ahrefs
২. লিস্ট করাঃ
এরপর আপনার ব্লগটি কি কি কিওয়ার্ড নিয়ে লেখা হবে, তার উপর একটি লিস্ট করতে হবে।
এই লিস্টটি আপনি গুগল স্পেডশিট বা কম্পিউটার নোটপ্যাড বা কম্পিউটার ওয়ার্ডপ্যাড বা মোবাইল নোটপ্যাডে লিখতে পারেন।
যেমনঃ আপনি কিভাবে মোবাইল দিয়ে টাকা আয় যায়, সেই বিষয়ে লিখতে চাচ্ছেন। আর আপনি এই বিষয়ের উপর ১৫০০ শব্দের আর্টিকেল লিখতে চাচ্ছেন।
এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনাকে একটি নোটপ্যাডে অনেকগুলি কিওয়ার্ডের একটি লিস্ট করতে হবে।
এর মধ্যে থেকে ১টি ফোকাস কিওয়ার্ড, ৫টি লং টেইল কিওয়ার্ড ও ৪টি রিলেটেড কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে।
কিওয়ার্ড লিস্টটি হবে এরকমঃ
- মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম
- মোবাইল দিয়ে টাকা আয়
- মোবাইল দিয়ে ইনকাম
- মোবাইল দিয়ে আয়
- মোবাইল দিয়ে অর্থ উপার্জন ইত্যাদি
যেভাবে কিওয়ার্ড লিস্ট করতে হবেঃ
৪ উপায়ে কিওয়ার্ড লিস্ট করা যায়।
১. গুগল সার্চ বার থেকে
আপনি যে বিষয়ে লিখতে চান, তা লিখে গুগলে সার্চ করার সময়, সার্চ বক্সে অনেকগুলি কিওয়ার্ড দেখাবে। এখান থেকে সবগুলি কিওয়ার্ড কপি করতে হবে।
যেমনঃ আপনি সার্চ করেন, ‘মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম’ লিখে তাহলে ঐ রিলেটেড অনেক কিওয়ার্ড বক্সে দেখাবে। সেগুলি সবগুলি কপি করে নোটপ্যাডে লিখে নিতে হবে।
২. সার্চ পেজ থেকে
আপনি যে বিষয়ে সার্চ করবেন।
তা লিখে সার্চ করলে সার্চ পেজের নিচে আরো রিলেটেড অনেক কিওয়ার্ড দেখাবে, আপনাকে সেই কিওয়ার্ডগুলিও নোট প্যাডে লিখে লিস্ট করতে হবে।
৩. ইউটিউব সার্চ থেকে
এর জন্য আপনি যে বিষয়ে লিখতে চান, তা লিখে ইউটিউবে সার্চ বারে সার্চ করলে, সার্চ বারে অনেক কিওয়ার্ডের লিস্ট দেখাবে।
সেই লিস্টগুলিও আপনাকে নোটপ্যাডে কপি করে নিতে হবে।
৪. টুলস এর মাধ্যমে
Google keyword planner ও Free keyword generator by ahrefs টুলস থেকেও আপনি কিওয়ার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে আপনাকে Google keywordword planner থেকে gmail দিয়ে login করে আপনি যে বিষয়ে লিখতে চান, তা Bangladesh সেট করে সার্চ করুন।
আপনি অনেক কিওয়ার্ড দেখতে পারেন। আপনাকে সকল কিওয়ার্ড কপি করে নোটপ্যাডে লিস্ট করে নিতে হবে।
এরপর Free keyword generator by ahrefs ওয়েবসাইট থেকেও একই পদ্ধতিতে কিওয়ার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
কিওয়ার্ড লিস্ট থেকে কিওয়ার্ড নির্বাচন করার উপায়
এবার কিওয়ার্ড লিস্টগুলি থেকে আপনি Google Keyword planner, Free keyword generator by ahrefs টুলস এর মাধ্যমে এনালাইসিস করে, আপনাকে কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে।
এদের মধ্যে একটি ফোকাস বা প্রধান কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে। আর ৫টি লং টেইল কিওয়ার্ড ও ৪টি রিলেটেড কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে।
যে কিওয়ার্ডের সার্চ ভিলিউম মোটামুটি, সিপিসি ভালো, কম্পিটিশন কম, সেই কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে।
উদাহরণঃ আপনি কিভাবে মোবাইল দিয়ে টাকা আয় যায়, সেই বিষয়ে লিখতে চাচ্ছেন। তাহলে এর
ফোকাস কিওয়ার্ড হবেঃ মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম।
লং টেইল কিওয়ার্ড হলঃ মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম app, মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার উপায়,
মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম ২০২৪, মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম ওয়েবসাইট, মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার সহজ উপায়।
রিলেটেড কিওয়ার্ড হলঃ মোবাইল দিয়ে আয়, মোবাইলের মাধ্যমে আয়, মোবাইল দিয়ে ইনকাম, মোবাইল দিয়ে অর্থ উপার্জন।
উপসংহার
এই আর্টিকেলে আমরা জানতে পারলাম, বাংলাতে আর্টিকেলে লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিওয়ার্ড রিসার্চ করে লিখতে হবে।
আশা করি, আপনারা খুব ভালভাবে শিখতে পেরেছেন, আর্টিকেলের কিওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায় সম্পর্কে। আর জানতে পেরেছেন কিভাবে সঠিকভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করে একটি ব্লগ বা আর্টিকেল লিখতে হয়।
পোস্টটি পড়ে কিওয়ার্ড রিসার্চ সম্পর্কে বুঝতে পারলে কিওয়ার্ড রিসার্চ করে আজই ব্লগ লেখা শুরু করে দিন। আর সোস্যাল মিডিয়াতে পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরো পোস্ট