ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। আর মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার কাজ গুলি সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত।
যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন পেশা। তাই এটি ঘরে বসে যেকোন মানুষ যেকোন সময়ে করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং যে শুধুমাত্র কম্পিউটারের মাধ্যমেই করা যায়। তা কিন্তু নয়।
আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং এর অনেক কাজ আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়েই করতে পারবেন। আর ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর এমন অনেকে কাজ আছে, যা করতে একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপের প্রয়োজন হয়। আবার এমন অনেক কাজ আছে, যেগুলি করতে একটি স্মার্টফোন হলেই যথেষ্ট। নানা ফ্রিল্যান্সিং সাইট এ আপনি কাজ করতে পারবেন।
এই ব্লগে আমরা মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়, এমন কয়েকটি কাজ নিয়ে আলোচনা করব।
এই পোস্টে যা যা থাকছে-
কেন মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা হয়?
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন। যাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কেনার সামর্থ্য নেই।
আবার অনেকে কম্পিউটারের থেকে মোবাইলে কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন।
তাদের জন্য মোবাইলে দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা অনেক আরামদায়ক হয়। আবার মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ গুলি অনেক সহজ হয়। এই কাজগুলি যেকোন সময়, যেকোন স্থান থেকে করা যায়।
আর আজকাল প্রায় সকল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। যা দিয়ে সহজেই কাজে অ্যাপ্লাই, কাজ সাবমিট, বায়ার কনভারসেশন করা যায়। এছাড়া মোবাইলের অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি, টাইপিং ইত্যাদি কাজ সহজেই করা যায়।
তবে খেয়াল রাখতে হিবে যে, আপনার মোবাইল ফোনটি যেন অবশ্যই স্মার্টফোন হয়। তাহলেই আপনি মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার কাজ গুলি করে অনলাইনে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ মোবাইলে টাইপিং করে টাকা ইনকাম করার উপায়
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সেরা ৯টি কাজ
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অনেক অনেক কাজ আছে।
সব কাজই কিন্তু মোবাইল দিয়ে করা যায়না। কিছু কাজ আছে যা কেবল কম্পিউটার দিয়েই করতে হয়। যেমন- গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি। যদিও আজকাল এই কাজগুলি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে করা যায়।
আবার অনেক কাজ আছে যা মোবাইল ও কম্পিউটার উভয় দিয়েই করা সম্ভব।
আপনাকে মোবাইল দিয়ে করা যায়, এই কাজগুলিই বেছে নিতে হবে।
আর এই কাজগুলিই আপনাকে শিখতে হবে।
আপনি চাইলে মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ গুলি করেও মাসে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আবার আপনি প্রফেশনালি এই কাজগুলি করতে পারবেন। জেনে নিন এমন সেরা ৯টি কাজ সম্পর্কে-
১. সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
যেকোন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এই কাজের অনেক চাহিদা রয়েছে। এর কাজ হল মূলত ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদিতে ওয়েবসাইট বা পণ্য প্রচারণার কাজ।
এখানে আপনাকে ফেসবুক পেজ তৈরি, পেজ সেট আপ, পোস্ট বুস্টিং, পেজ প্রমোশন, রিলস বানানো, ইন্সটাগ্রাম পোস্ট দেওয়া ইত্যাদি কাজ করতে হয়।
আর এই কাজগুলি আপনি আপনার মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই করতে পারবেন।
আর এই কাজ আপনি আপওয়ার্ক, ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার সহ বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে সহজেই পাবেন।
২. ইউটিউব মার্কেটিং
মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং করার সহজ একটি কাজ হল ইউটিউব মার্কেটিং। এর মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেলের (Youtube Channel) ভিডিও এর টাইটেল, মেটা, কিওয়ার্ড ইত্যাদি সেট করার কাজ করতে হয়।
এই কাজটি আপনার মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই করতে পারবেন।
এছাড়া ইউটিউব চ্যানেল এসইও, হ্যাশ ট্যাগ (#) সেট এই কাজের অন্তর্ভুক্ত।
ফাইবার সহ যেকোন মার্কেটপ্লেসে এই কাজের খুবই চাহিদা। আপনি এই কাজ করে ভাল পরিমাণ টাকা ইনকাম শুরু করে দিতে পারবেন।
৩. ইউটিউব থাম্বনেইল ডিজাইন
ইউটিউবের থাম্বনেইল (Youtube Thumbnail) বলতে বোঝায়, ইউটিউবে প্রতিটা ভিডিওতে আমরা যে ছবি দেখতে পাই সেটা।
এই থাম্বনেইল আপনি আপনার মোবাইল দিয়েই সুন্দর করে ডিজাইন তৈরি করতে পারবেন।
আপনি মোবাইলের বিভিন্ন image editor অ্যাপ দিয়ে সহজেই ইউটিউবের থাম্বনেইল ডিজাইন করতে পারবেন। আর এটা করা খুবই সহজ।
এই কাজটিও আপনি ফ্রিল্যান্সিং সাইটে করে আয় করতে পারবেন।
৪. ডাটা এন্ট্রি – মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং
আপনি আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে ডাটা এন্ট্রি করে মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
এই কাজের চাহিদার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আপনি আপনার মোবাইল দিয়ে টাইপিং, ডাটা মাইনিং, স্ক্রাপিং, ট্রন্সক্রাইবিং এর মত সকল কাজ করতে পারবেন।
ডাটা এন্ট্রি (Data Entry) কাজের ব্যপকতা অনেক। অনেকেই আছেন যারা শুধুমাত্র মোবাইল দিয়ে এই কাজ করে মাসে লাখ টাকা আয় করছেন।
৫. আর্টিকেল রাইটিং
যেকোন আর্টিকেল, ব্লগ আপনি আপনার মোবাইল দিয়ে টাইপ করে লিখতে পারবেন। আপনি এই কাজটি শুয়ে বসে করতে পারবেন। মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সবথেকে সহজ কাজ হল ব্লগিং করা।
এই কাজের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।
প্রায় সকল প্রসিদ্ধ ফ্রিল্যান্সিং সাইটে এই কাজ পাবেন। তবে আপনাকে আর্টিকেল লেখার নিয়ম জানতে হবে। আর আপনি আপনার লেখার ক্ষমতা দিয়ে এখানে ভাল করতে পারবেন।
আপনি একটু ধৈর্য্য ও সময় দিলে এই কাজ করে প্রতি মাসে হাজার ডলার আয় করতে পারবেন।
৬. টি শার্ট ডিজাইন
Etsy, Shopify, Wix ইত্যাদি ইকমার্স প্ল্যাটফর্মের জন্য টি শার্ট, হুডি ইত্যাদি ডিজাইনের ব্যপক চাহিদা।
বিভিন্ন মোবাইল সফটওয়ারের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে এই কাজগুলি করতে পারবেন। আর বায়ারকে তা সাবমিট করতে পারবেন।
আপনি Canva, T-Shirt Design Studio ইত্যাদি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এটি করতে পারবেন। এই কাজ অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা আয় করার কাজ।
ফাইবার ফ্রিল্যান্সিং সাইটে এই কাজের ব্যাপক চাহিদা। আপনিও চাইলে এই কাজের মাধ্যমে মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন।
৭. ইমেজ ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভার
যেকোন ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভের কাজও ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলিতে প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যায়।
এর মত সহজ কাজ আর একটিও নেই।
আপনি মোবাইলের বিভিন্ন অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই কাজটি করতে পারবেন।
আর মোবাইল দিয়ে সহজ এই কাজটি করে আপনি মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
৮. লোগো ডিজাইন – মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং
অনেকেই মনে করেন লোগো ডিজাইনের (Logo Design) কাজ শুধুমাত্র কম্পিউটার দিয়েই করা যায়।
কিন্তু তারা ভুল। আপনি আরো সহজে আপনার হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে এই কাজ করতে পারবেন।
আপনি মোবাইলের বিভিন্ন অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একদম মান সম্মত লোগো বানাতে পারবেন।
এই কাজের চাহিদা কোন দিনও শেষ হবে না। আপওয়ার্ক, ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার, গুরু, ৯৯ ডিজাইনস ইত্যাদ ওয়েবসাইটে এই কাজটি পাবেন। আর এটি করে অনেক বেশি আয় করতে পারবেন।
৯. ভিজিটিং কার্ড ডিজাইন
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার আরো একটি সহজ কাজ হল ভিজিটিং কার্ড ডিজাইনের কাজ।
অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা ভিজিটিং কার্ডের লেআউট থেকে ফ্রিতে কার্ড বানাতে দেয়।
এছাড়া অনেক মোবাইল অ্যাপ আছে। যা দিয়ে ভিজিটিং কার্ড বানানো যায়।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলিতে ভিজিটিং কার্ডের চাহিদা অনেক। কারণ সকল ব্যবসাতেই ভিজিটিং কার্ড লাগে।
আপনি মোবাইল দিয়ে এই কাজটি করে আপনার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।
শেষকথা – মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার কাজ করার আগে আপনাকে সেই কাজে খুবই পারদর্শী হতে হবে।
আপনি একসাথে একাধিক কাজেও দক্ষ হতে পারেন। কারণ মোবাইলের কাজগুলি অনেক সহজ হয়ে থাকে।
আপনি যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন। তাহলে মোবাইল দিয়েও আপনি ফুল টাইম পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন।
আর কাজ পাওয়ার জন্য মার্কেটপ্লেসে খুব ভালভাবে একাউন্ট খুলতে হবে। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরো পোস্ট