আপনি যদি ব্লগ বা আর্টিকেল লিখতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই আর্টিকেলের ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

কিন্তু বেশিরভাগ ব্লগার সঠিকভাবে ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার না করার কারণে, তাদের আর্টিকেলগুলি গুগলে র‍্যাংক করে না বা গুগল সার্চ ইঞ্জিনে দেখায় না।

এছাড়া ব্লগ পোস্টে ভালো ভিউ হয়না। তাই আমাদের জানতে হবে, ফোকাস কিওয়ার্ড কিভাবে বের করতে হয়, ব্লগ বা আর্টিকেলের কোথায় কোথায় ফোকাস কিওয়ার্ড লিখতে হয় বা সেট করতে হয়।

আরো জানতে হবে ফোকাস কিওয়ার্ড একটি ব্লগে কতবার ব্যবহার করতে হবে ও আর্টিকেল গুগলে র‍্যাংক করার ক্ষেত্রে ফোকাস কিওয়ার্ডের ভূমিকা কি।

ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন

যে কিওয়ার্ড একটি আর্টিকেলের সারমর্ম নির্দেশ করে, তাকে ফোকাস কিওয়ার্ড বলে। এই কিওয়ার্ডের জন্য গুগল আমাদের ব্লগটি তার সার্চ ইঞ্জিনে একটি ভালো ফলাফল দেয়।

মূলত ফোকাস কিওয়ার্ডটি গুগলে র‍্যাংক করে। এটি আর্টিকেলের প্রধান বিষয়।

মনে করুন, আপনি একটি ব্লগ লিখতে চান, তার টাইটেল হল- কিভাবে মোবাইল দিয়ে ইনকাম করার যায়।

এখানে আপনাকে ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে- ‘মোবাইল দিয়ে ইনকাম‘। কারণ মানুষ সাধারণত মোবাইল দিয়ে ইনকাম লেখাটি লেখে সার্চ করবে।

আর মানুষ বড় কিছু না লিখে ছোট কিছু লিখেই সার্চ করে থাকে। ব্লগের বিভিন্ন জায়গায় এই ফোকাস কিওয়ার্ড লিখতে হয়।

আবার এই ফোকাস কিওয়ার্ডের সাথে কিছু যুক্ত করে লং টেইল কিওয়ার্ড লিখতে হয়। এই ফোকাস কিওয়ার্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রিলেটেড কিওয়ার্ড লিখতে হয়।

যেমন- ”মোবাইল দিয়ে আয়”। আমাদের জানতে হবে আর্টিকেলের ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন করার উপায় সম্পর্কে। নিচে থেকে দেখে নিন, কেন ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়।

কেন ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়

ফোকাস কিওয়ার্ড এর জন্য ব্লগ র‍্যাংক করে। এই কিওয়ার্ড কে টার্গেট করেই সাধারণত ব্লগ বা আর্টিকেল লিখতে হয়

কেননা এমন কিছু লিখতে হবে, যাতে করে মানুষ সেটা পড়ে। হাবিজাবি লিখে কোন লাভ নেই। এটা হল প্রধান কিওয়ার্ড।

এর সাথে রিলেটেড আরো অনেক কিওয়ার্ড সিলেক্ট করতে হয়। গুগল ফোকাস কিওয়ার্ড বুঝেই একটি ব্লগ বা আর্টিকেলকে র‍্যাংক করায়।

যেকোন ব্লগ বা আর্টিকেলে অবশ্যই একটি ফোকাস কিওয়ার্ড টার্গেট করতে হবে।

সঠিক ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন না করার ফলে, সার্চ ভিজিবিলিটি কমে যায়, ইউজার অভিজ্ঞতা ভাল হয়না,আর্টিকেল র‍্যাংক হয়না।

আর্টিকেল লিখে ইনকাম করতে ফোকাস কিওয়ার্ড কিভাবে নির্বাচন করতে হয়,তা জানতে এই ভিডিওটি দেখুন।

একটি আর্টিকেলের ফোকাস কিওয়ার্ড এর উদাহরণঃ

ধরুন, আপনি একটি ‘পেটের মেদ কমানোর উপায়’ সম্পর্কে ব্লগ লিখতে চাচ্ছেন। আর, আপনার ব্লগের টাইটেল যদি হয়, “প্রাকৃতিকভাবে পেটের মেদ কমানোর উপায়”।

তাহলে এর ফোকাস কিওয়ার্ড হবে “পেটের মেদ কমানোর উপায়”। একটি ব্লগের টাইটেলের উপর ভিত্তি করে, কি ফোকাস কিওয়ার্ড হবে, তা আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে।

ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন করা, অনেকটা কিওয়ার্ড রিসার্চ করার মতোই। দেখে নিন, কিভাবে একটি আর্টিকেলের জন্য ফোকাস কিওয়ার্ড নির্ধারণ করতে হয়।

আর্টিকেলের ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন করার উপায়

ফোকাস কিওয়ার্ড বের করার ৩টি ধাপ আছে। তা হলঃ

  • অনেকগুলি কিওয়ার্ডের লিস্ট করা
  • কিওয়ার্ড বাছাই করা
  • এদের মধ্যে সেরা কিওয়ার্ড ফোকাস কিওয়ার্ড হিসেবে নির্বাচন করা

১. লিস্ট করাঃ কিওয়ার্ডের লিস্ট করার জন্য গুগল সার্চ বার, গুগল সার্চ রেজাল্টপেজ, Google Keyword planner, Ahrefs keyword planner ও থেকে অনেকগুলি কিওয়ার্ড সংগ্রহ করে নোটপ্যাডে সিরিয়ালি লিস্ট করতে হবে।

এই টুলস গুলির সাহায্যে কিভাবে কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হয়, তা আমরা কিওয়ার্ড রিসার্চ করার উপায় ব্লগ থেকে জেনেছি।

২. কিওয়ার্ড বাছাই করাঃ  লিস্ট করা কিওয়ার্ডের মধ্যে থেকে যেসকল কিওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম মাঝারি, যাদের কিওয়ার্ড কম্পিটিশন বা কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি কম, যাদের সিপিসি ভালো এমন ৩ থেকে ৪টি ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন করার জন্য বাছাই করতে হবে।

৩. কিওয়ার্ড নির্বাচন করাঃ বাছাই করা কিওয়ার্ড থেকে সবথেকে একটি পারফেক্ট কিওয়ার্ড ফোকাস কিওয়ার্ডের জন্য পছন্দ নির্বাচন করতে হয়।

উপরের নিয়মে সহজেই একটি আর্টিকেলের ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হয়।

আর্টিকেলে কতবার ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করার যাবে?

একটি আর্টিকেলে সাধারণত একটি ফোকাস কিওয়ার্ড আর্টিকেলটির মোট শব্দের সর্বোচ্চ ১% হারে ব্যবহার করতে হবে না লিখতে হবে।

অর্থাৎ আপনার আর্টিকেলে যদি ১৫০০ শব্দ ব্যবহার করা হয়। তাহলে ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে ১২ থেকে ১৫ বার।

খুব বেশি বেশি ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবেনা।

বেশি কিওয়ার্ড ব্যবহারের দরকার হলে ফোকাস কিওয়ার্ডের জায়গায় রিলেটেড কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।

আবার খুব কম পরিমাণ ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবেনা। এতে করে আর্টিকেলটির সার্চ ভিজিবিলিটি আরো কমে যাবে।

কত শব্দের মধ্যে ফোকাস কিওয়ার্ড লিখতে হবে?

সাধারণত ফোকাস কিওয়ার্ড ৪ শব্দের মধ্যে হতে হবে। কেননা বেশি শব্দের ফোকাস কিওয়ার্ড লিখে মানুষ সাধারণত সার্চ করেনা।

তাই ছোট সাইজের ফোকাস কিওয়ার্ড হতে হবে। আবার এটি ৪ শব্দের কম, ২ বা ৩ শব্দের হলেও সমস্যা নেই।

তবে একদম ছোট ফোকাস কিওয়ার্ড আবার র‍্যাংক করতে চায়না। কারণ এই ধরনের কিওয়ার্ডে কম্পিটিশন অনেক বেশি থাকে।

তাই সাধারণত ৪ শব্দের ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন করলে সবথেকে ভালো হবে।

ব্লগে কোথায় কোথায় ফোকাস কিওয়ার্ড সেট করতে হয়

একটি ব্লগ বা আর্টিকেলের জন্য ফোকাস কিওয়ার্ড খুবই গুরত্বপূর্ণ। কেননা, ফোকাস কিওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করেই একটি ব্লগ র‍্যাংক করে।

তবে ফোকাস কিওয়ার্ড একটি ব্লগের সঠিক জায়গায় ব্যবহার না করলে, ব্লগটি র‍্যাংক করবেনা।

দেখে নিন, আর্টিকেলের কোন কোন জায়গায় ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।

১. আর্টিকেলের টাইটেলে

আর্টিকেল র‍্যাংক করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ফোকাস কিওয়ার্ডটি আর্টিকেলের টাইটেলের মধ্যে থাকতে হবে। আর প্রতিটি আর্টিকেল H1 ট্যাগের হয়ে থাকে।

আর এই ট্যাগের প্রাধান্য গুগলে অনেক বেশি হয়ে থাকে। H1 ট্যাগে যখন, ফোকাস কিওয়ার্ড থাকে, তখন সেটি এসইও এর জন্য খুবই ভালো হয়। তখন ব্লগটি গুগলে র‍্যাংক করে যায়।

২. আর্টিকেলের প্রথম প্যারাতে

একটি আর্টিকেলের প্রথম প্যারা খুবই গুরত্বপূর্ণ। এই প্যারা মেটা ডিস্ক্রিপশন হিসেবে সার্চ ইঞ্জিনে কাজ করে।

তাই প্রথম প্যারাতে ফোকাস কিওয়ার্ড থাকলে, সেই কিওয়ার্ডটি গুগলে সহজেই র‍্যাংক করে।

৩. শেষ প্যারাতে

একটি আর্টিকেলের উপসংহার বা শেষ প্যারাতে ফোকাস কিওয়ার্ড থাকতে হবে। এতে করে ব্লগটির ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ভালো হয় ও তা এসইও এর জন্য ভালো।

৪. H2, H3, H4 ইত্যাদি হেডিং ট্যাগে

একটি আর্টিকেলের লেখা অনেক দৃষ্টিনন্দন করে লেখার জন্য, এর ভেতরে অনেক জায়গায় H2, H3, H4 ইত্যাদি হেডিং ট্যাগ ব্যবহার করে প্যারা লিখতে হয়।

একটি আর্টিকেল যদি ১৫০০ শব্দের হয়, তাহলে আর্টিকেলের কমপক্ষে ৪-৫ টি হেডিং ট্যাগে ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।

উপসংহার

এই আর্টিকেলে আপনারা আশা করি, ফোকাস কিওয়ার্ডের গুরত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

আর জানতে পেরেছেন কিভাবে ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন করেতে হয়, কেমন ধরনের ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়, আর আর্টিকেলের কোথায় কোথায় ফোকাস কিওয়ার্ড সেট করতে হয়।

এই নিয়ম অনুসরণ করে ফোকাস কিওয়ার্ড বের করে ব্লগ লেখা শুরু করে দিন। আর এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন।