ফাইবারের মাধ্যমে টাকা আয় করা এখন খুবই সহজ। আপনি চাইলেই ঘরে বসে অনলাইনে ফাইবার (Fiverr) থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। ফাইবারে অনেক অনেক কাজের সমারহ রয়েছে। আপনি যদি যেকোন একটি কাজে খুব ভালভাবে দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে ফাইবার থেকে খুব অনায়েসেই টাকা আয় করতে পারবেন।
ফাইবার কি (Fiverr) কি?
ফাইবার হল একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এখান থেকে বায়ার আপনাকে খুঁজে নেবে। আর আপনাকে দিয়ে কাজ করাবে। কাজ শেষে আপনাকে টাকা প্রদান করবে। আপনি যদি যেকোন কাজে খুব ভাল দক্ষ হয়ে থাকেন। তাহলে সেই বিষয়ে আপনাকে গিগ (Gig) খুলতে হবে।
আপনার গিগ দেখে বায়ার আপনাকে পছন্দ করলে। সে আপনাকে কাজে নেবে। আর কাজ শেষে আপনাকে টাকা প্রদান করবে।
ফাইবারে আয় করার জন্য কি কি কাজে দক্ষ হতে হবে?
ফাইবারের মাধ্যমে টাকা আয় করার ক্ষেত্রে আপনাকে যেকোন একটি কাজে খুবই দক্ষ হতে হয়। তবে এক্ষত্রে আপনি যে কাজই শিখুন না কেন, সেটা খুব ভালভাবেই শিখতে হবে। আর আপনাকে সেই কাজের পোর্টফোলিও বানাতে হবে। আর এই কাজগুলি আপনি ইউটিউব ভিডিও দেখে শিখতে পারেন। আর কাজ গুলি ২ থেকে ৩ মাস ধরে খুব ভালভাবে শিখতে হবে।
ফাইবারে কাজের কোন শেষ নেই। তবে যে কাজগুলির ফাইবারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা তা হলঃ
- ডাটা এন্ট্রি
- ডাটা মাইনিং
- ওয়েব অ্যানালাইসিস
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- ভিডিও এডিটিং
- ওয়েব ডিজাইন
- এস ই ও
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ইমেইল মার্কেটিং
- অ্যাফেলিয়েট মার্কেটিং
- ডিজিটাল মার্কেটিং
অবশ্যই পড়ুনঃ
ফাইবার (Fiverr) গিগ (gig) কি?
ফাইবারে আপনি যে কাজ পারেন বা যে কাজে আপনি দক্ষ। সেই কাজের একটি বর্ণনা ফাইবারে সেট করতে হয়।
অর্থাৎ আপনি যে কাজ পারেন, তার বিবরণ ফাইবারে দিতে হয়। এই বিবরণকেই গিগ (gig) বলে। আর এই গিগ দেখে বায়ার আপনাকে কাজে নেবে।
ফাইবারের গিগে কি কি সেট করতে হয়?
আপনি যে কাজ পারেন তার টাইটেল, বর্ণনা, ক্যাটাগরি ফাইবারে গিগে সেট করতে হয়। এছাড়া আপনি আপনার কাজে কত টাকা নিবেন ও কাজের পোর্টফোলিও গিগে সেট করতে হবে। এছড়া গিগে আপনাকে একটি আকর্ষণীয় গিগ ইমেজ দিতে হবে। এই ইমেজ বা ছবি যত ভাল হবে। আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তত ভাল হবে।

ফাইবারের মাধ্যমে টাকা আয় করার উপায়
কিভাবে ফাইবারে একাউন্ট খুলতে হয়?
ফাইবারে কাজ করে টাকা ইনকাম করার জন্য। সঠিক উপায়ে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। নিচে স্টেপ বাই স্টেপ দেখুন কিভাবে ফাইবারে একটি একাউন্ট খুলতে হয়-
১. প্রথমে ফাইবারে ঢুকতে হবে। এরপর Join বাটনে ক্লিক করে সাইন আপ করতে হবে।
২. এবার ফাইবারের ড্যাশবোর্ড থেকে উপরের ডান দিকের আইকনে ক্লিক করতে হবে। এখান থেকে আপনার full name, email দিয়ে save changes বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৩. এরপর profile থেকে আপনার ছবি, display name ও আপনার সম্পর্কে ১ লাইনে লিখতে হবে। আপনি যে কাজ পারেন সেই রিলেটেড কিছু লিখতে হবে। এরপর update বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৪. এরপর আপনার কাজের একটি বর্ণনা দিতে হবে।
৫. এরপর language ও social media লিংক দিতে হবে।
৬. এরপর skills থেকে আপনি যে যে বিষয়ে দক্ষ তা দিয়ে দিতে হবে।
৭. Education থেকে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা। আপনি কোন জায়গা থেকে কাজ শিখে এসেছেন তার তথ্য দিয়ে দিতে হবে। আপনি যেখান থেকে কাজ শিখে এসেছেন। সেখানকার কোন সার্টিফিকেট থাকলে তা দিয়ে দিতে হবে।
৮. এবার become a seller অপশন থেকে আপনার প্রফাইলটি ১০০% সম্পূর্ণ করতে হবে। এর জন্য এখান থেকে আপনার পুরো নাম, ডিস্প্লে নাম, আপনার occupation, personal website(যদি থাকে) দিতে হবে। এরপর আপনার ইমেইল ও ফোন ফেরিফিকেশন করতে হবে।
৯. এরপর সর্বশেষে আপনি যে যে কাজ পারেন সেই কাজের গিগ (gig) আপনাকে তৈরি করতে হবে। কিভাবে গিগ তৈরি করতে হয় তা নিচের লিংকে দেখুন-
এখন বায়ার আপনার গিগ দেখে আপনাকে কাজে নেবে ও আপনার টাকা আয় হবে।
ফাইবারে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় মনে রাখতে হবে?
আপনি যদি ফাইবারে কাজ করেন। তাহলে এখানে কাজ করে একটি ভাল পরিমাণ আয় করা সম্ভব। কারণ ফাইবার হল একটি প্রসিদ্ধ মার্কেটপ্লেস। তবে এখানে কাজ পাওয়ার আগে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। সেগুলি হল-
১. যেকোন কাজে ভালভাবে দক্ষতাঃ ফাইবারে কাজ পাওয়ার জন্য আপনাকে যেকোন একটি কাজে খুব ভালভাবে দক্ষ হতে হবে।
২. ইউনিক গিগঃ আপনার গিগ যেন ইউনিক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. ইউনিক গিগ টাইটেল ও বর্ণনাঃ আপনার গিগের টাইটেল ও বর্ণনা ভাল হতে হবে।
৪. পোর্টফোলিওঃ আপনার গিগে অনেকগুলি পোর্টফোলিও যোগ করতে হবে।
৫. ইউনিক ছবিঃ আপনার গিগের ছবি যেন ইউনিক ও সুন্দর হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।
৬. ইংরেজী জানাঃ আপনাকে ইংরেজীতে মোটামুটি ভাল হতে হবে। কারণ বায়ারের সাথে আপনাকে ইংরেজীতে যোগাযোগ করতে হবে। তাই বায়ার যেন আপনার কথা বুঝতে পারেন। আর আপনি যেন বায়ারের কথা বুঝতে পারেন সেই রকম ইংরেজী জানতে হবে। বায়ারের সাথে আপনাকে ইংরেজীতে ম্যাসেজ আদান প্রদান করতে হবে।
ফাইবারের একজন ফ্রিল্যান্সার কয়টি গিগ খুলতে পারেন?
আপনি এখানে সর্বোচ্চ ২০ টি গিগ খুলতে পারবেন। তবে আপনি ধীরে ধীরে আপনার আয় বাড়ানোর মাধ্যমে আরো গিগ খুলতে পারবেন। তবে আপনাকে খুব ভালভাবে কাজ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বায়ার যেন আপনার উপর সন্তুষ্ট হয়। আর আপনার কাজে যেন রেটিং ৫ এর মধ্যে ৫ দেয়। আপনার গিগের রেটিং যত ভাল হবে। আপনার পরবর্তী কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তত ভাল হবে।
ফাইবারের মাধ্যমে টাকা আয় কি মোবাইল দিয়ে করা সম্ভব?
আপনি চাইলেই মোবাইল দিয়ে আপনার ফাইবারের প্রফাইল ও গিগ তৈরি করতে পারবেন। আর ডাটা এন্ট্রি ও ডাটা মাইনিং এর মত সহজ কাজগুলি মোবাইল দিয়েই করতে পারবেন।
আর ফাইবারের মোবাইল অ্যাপ দিয়ে আপনি সব সময় বায়ারের ম্যাসেজ চেক করতে পারবেন। এছাড়া আপনার গিগের ইম্প্রেশন ও ক্লিক দেখতে পারবেন। এছাড়া ফাইবারের মোবাইল অ্যাপ দিয়ে আপনি সব সময় কানেক্টেড থাকতে পারবেন। তবে বড় কাজ গুলির ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করাই ভাল হবে।
ফাইবারের মাধ্যমে মাসে কত টাকা আয় করা সম্ভব?
ফাইবার মানে হল ৫ ডলার। শুরুর দিকে ফাইবারের সর্বনিম্ন কাজের রেট ছিল ৫ ডলার। কিন্তু এখন অধিকাংশ কাজেই ফাইবারের কাজের রেট সর্বনিম্ন ১০ থেকে ২০ ডলার। আপনি যদি ডাটা এন্ট্রি কাজে দক্ষ হোন। তাহলে আপনার গিগ রেট হবে সর্বনিম্ন ১০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ ডলার পর্যন্ত। তাই আপনি যদি ডাটা এন্ট্রি কাজে গড়ে প্রতি গিগ থেকে ৩০ ডলার আয় করেন। আর আপনি যদি মাসে ১০ টা কাজ পান। তাহলে আপনার মাসিক আয় হবে ৩০০ ডলার বা ৩৩০০০ টাকা।
আর আপনি যদি একজন ওয়েব ডিজাইনার হোন। তাহলে আপনার গড় গিগ রেট হবে ২০০ ডলার। সেক্ষত্রে আপনি যদি মাসে ১০ টা কাজ করে থাকেন। সেক্ষত্রে আপনার আয় হবে ২০০০ ডলার বা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এখান থেকে কাজ করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। আপনি চাইলে একাধিক গিগ খুলতে পারেন। সেক্ষত্রে প্রত্যেকটা গিগ থেকেই তখন টাকা আয় করতে পারবেন। তখন আপনার আয় আরো বেড়ে যাবে।
ফাইবার থেকে কিভাবে টাকা উঠাব?
ফাইবারে কাজ করে কাজ জমা দেওয়ার পর বায়ার আপনাকে টাকা প্রদান করবে। সেই টাকা আপনার একাউন্টে জমা হয়ে থাকনে। আপনি খুব সহজে Payoneer দিয়ে টাকা উইথড্র করতে পারবেন। এই টাকা Payoneer থেকে সরাসরি আপনার ব্যাংকে বা বিকাশে নিতে পারবেন।
ফাইবার থেকে আয়কৃত টাকা উঠাতে ফাইবার কত টাকা কাটে?
ফাইবার প্রতিটি গিগ থেকে আয়কৃত টাকা থেকে ২০% কেটে নেয়। অর্থাৎ আপনি যদি ফাইবার থেকে ১০০ ডলার আয় করেন, তাহলে ফাইবার আপনাকে দেবে ৮০ ডলার। তবে ফাইবারের এই ২০% কেটে নেওয়া। আপনার কাছে কিছুই মনে হবেনা, যদি আপনার ইনকাম অনেক বেশি হয়।
উপসংহার
অনলাইনে কাজ করে টাকা আয় করার ক্ষেত্রে ফাইবার (Fiverr) খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম। বাংলাদেশের অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সারেরা এই মাধ্যম থেকে কাজ করে টাকা আয় করে থাকে।
আপনিও চাইলে ঘরে বসে অনলাইন থেকে ফাইবার থেকে টাকা আয় করতে পারেন। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে খুব ভাল করে জেনে বুঝে কাজ করতে হবে। নতুবা আপনার ফাইবার প্রফাইলটি ভাল পারফর্ম করবে না।
অবশ্যই পড়ুনঃ