ফ্রিল্যান্সিং মানে হল মুক্তপেশা। যেকেউ চাইলেই ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে পারবেন। তবে এর জন্য বিভিন্ন কাজে প্রথমে দক্ষ হতে হবে। এটা মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে করা যায়। এটা ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে করা যায়। এটা করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি মার্কেটপ্লেসে যোগ হতে হবে। মার্কেটপ্লেস মানে হল যেখানে কাজ পাওয়া যায়। অনেক মার্কেটপ্লেসের মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ মার্কেটপ্লেস হল Upwork (আপওয়ার্ক)।
এছাড়াও রয়েছে Fiverr (ফাইবার) , People Per hour (পিওপল পার আওয়ার)। এছাড়া Freelancer.com (ফ্রিল্যান্সার ডট কম) ইত্যাদি সহ অনেক মার্কেটপ্লেস রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কি কি প্রয়োজন
১. একটি কাজে খুব ভালভাবে দক্ষতা।
২. একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ও মোবাইল।
৩. ভালভাবে ইংরেজী জানতে হবে।
৪. আপনার কাজের অনেকগুলো স্যাম্পল বা পোর্টফোলিও।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কি কি মার্কেটপ্লেস আছে?
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অনেক মার্কেটপ্লেস আছে। তবে এদের মধ্যে সবথেকে ভাল মার্কেটপ্লেসগুলো হল:
Upwork সহ অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার উপায়
১. কাজের পোর্টফোলিও বা ডেমো তৈরিঃ
Upwork, Freelancer.com, Guru, People per hour মার্কেটপ্লেস গুলোর বৈশিষ্ট্য মূলত একই। এখানে আপনি যেই কাজ পারেন, সেই কাজ আপনাকে খুজে নিতে হবে। এরপর সেই কাজে আপনাকে অ্যাপ্লাই করতে হবে। অ্যাপ্লাই করার সময় বায়ারকে আপনাকে জানাতে হবে আপনি সেই কাজ পারেন। আপনি যে কাজ পারেন, তার প্রমাণ স্বরুপ আপনাকে আপনাকে কাজের ডেমো বা পোর্টফোলিও দিতে হবে।
২. ফিক্সড প্রাইজ বা ঘন্টা হিসেবে কাজ করাঃ
এই মার্কেটপ্লেসে আপনি হলেন ফ্রিল্যান্সার । আর যে কাজ দিবে সে হল বায়ার। বায়ার যদি আপনাকে পছন্দ করে তাহলে আপনি তার কাজ করা শুরু করে দিতে পারবেন। এখানে ২ ভাবে কাজ করা যায় ঘন্টা হিসেবে অথবা ফিক্সড রেটে।
ঘন্টা হিসেবে কাজ করলে আপনি প্রতি ঘন্টায় টাকা পেতে শুরু করবেন। আর ফিক্সড রেটে কাজ করলে আপনি কাজ জমা দেওয়ার পর টাকা পেতে পারেন। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকমের টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনের কাজ করে থাকেন তাহলে প্রতি ঘন্টা কজের জন্য আপনি ৩০ ডলার থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। অর্থাৎ তখন আপনি ঘন্টায় ৩০-১০০ ডলার আয় করতে পারবেন।
৩. টাকা তোলার জন্য ব্যাংক একাউন্ট সেট করাঃ
তবে অবশ্যই আপনার কাজে আপনাকে অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হবে। এই মার্কেটপ্লেসগুলো থেকে আপনি সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন।
Fiverr মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার উপায়
Fiverr মার্কেটপ্লেসের বৈশিষ্ট্য কিছুটা ভিন্ন। এখানে আপনাকে Gig (গিগ) তৈরি করতে হয়। গিগ মানে হল- আপনি যেই সমস্ত কাজ পারেন তার বর্ণনা আকারে তুলে ধরে সেট করা।
এখানে আপনাকে কাজে অ্যাপ্লাই করতে হয় না। বায়ারই আপনাকে আপনার গিগ দেখে খুজে নেবে। আর আপনাকে কাজে নেবে।
২. পোর্টফোলিও তৈরিঃ
গিগ তৈরির সময় আপনাকে আপনার কাজের পোর্টফোলিও সেখানে অবশ্যই সেট করতে হবে। বাংলাদেশে Fiverr সবথেকে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস।
৩. টাকা তোলার মাধ্যম সেট করাঃ
Fiverr থেকে খুব সহজে টাকা তোলা যায়। এখান থেকে সাধারণত বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সার Payoneer (পেওনার) এর মাধ্যমে টাকা তুলে থাকে।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস |
কাজের ধরণ |
পেমেন্ট মেথড |
---|---|---|
Upwork |
ফিক্সড প্রাইজ (Fixed Price), ঘন্টা হিসেবে (Hourly) |
ব্যাংক |
Freelancer |
ফিক্সড প্রাইজ (Fixed Price), ঘন্টা হিসেবে (Hourly) |
ব্যাংক |
Fiverr |
ঘন্টা হিসেবে (Hourly) |
পেওনার (Payoneer) |
Guru |
ফিক্সড প্রাইজ (Fixed Price), ঘন্টা হিসেবে (Hourly), টাস্ক বেসড (Task-based) |
ব্যাংক |
99 Designs |
কন্টেস্ট বেসড (Contest Based) | ব্যাংক, পেওনার (Payoneer) |
Seo Clerks |
ফিক্সড প্রাইজ (Fixed Price) |
ব্যাংক, পেওনার (Payoneer) |
People Per Hour |
ঘন্টা হিসেবে (Hourly) |
ব্যাংক, পেওনার (Payoneer) |
ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার জন্য কোন কোন কাজে দক্ষ হতে হবে?
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কাজের কোন শেষ নেই। আপনি যেকোন একটি কাজ করেও ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। আবার একাধিক কাজ করেও করতে পারেন। তবে শুরুতে যেকোন একটি কাজ খুব ভালভাবে শিখে তাতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। খুব ভালভাবে দক্ষ না হয়ে এখানে কাজ শুরু করলে প্রথমেই আপনি সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য যে কাজগুলি আপনি শিখতে পারেন-
- ওয়েবডিজাইন
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ডাটা এন্ট্রি
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- এসইও
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি।
এদের মধ্যে ডাটা এন্ট্রির কাজ সবথেকে সহজ হয়ে থাকে। আপনি চাইলেই মোবাইল দিয়েও ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন। তবে ডাটা এন্ট্রির কাজে তুলনামূলক ভাবে আয় কম হয়ে থাকে। আর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফ্রিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি কাজে আউ অনেক বেশি হয়।
ফ্রিল্যান্সিং এর কোন কাজ করে সবথেকে বেশি আয় করা যায়
এটার কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। আপনি যদি অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার আয় অনেক বেশি হবে। তবে নতুনদের জন্য আয় করা বেশি সম্ভব হয় না। কারণ নতুন ফ্রিল্যান্সারদের বায়ার বেশি টাকায়
নিতে চায় না। তাই ধৈর্য্য ধরে কাজ করে যেতে হবে। আপনার কাজের রেট ধীরে ধীরে এমনিতেই বাড়বে। ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি কাজের রেট অনেক বেশি থাকে।
এছাড়া গ্রাফিক্স ডিজাইন, এস ই ও এর মত কাজেও অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। তবে ডাটা এন্ট্রির মত সহজ কাজে আয় কিছুটা কম হয়ে থাকে। তবে ডাটা এন্ট্রি কাজের চাহিদা অনেক বেশি থাকে।
কিভাবে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়
ফ্রিল্যান্সিং মোবাইল এবং কম্পিউটার উভয় দিয়েই করা যায়। আপনি যদি ডাটা এন্ট্রি, ডাটা স্ক্রাপিং, ওয়েব অ্যানালাইসিসের কাজ করে থাকেন। তবে মোবাইল বা স্মার্টফোনের মাধ্যমেই করা সম্ভব।
আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করে থাকেন। সেক্ষত্রে আপনার একটি কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে। আপনার কম্পিউটার যে অনেক হাই কনফিগারেশনের হতে হবে এমনটি নয়। একটা মোটামুটি মানের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ হলেই হবে। তবে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ভিডিও এডিটিং এর মত কাজে ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটারের প্রয়োজন পড়ে।
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে কিভাবে কাজ শিখব
আপনি চাইলে ঘরে বসে ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে শিখে শুরু করতে পারেন। এক্ষত্রে আপনাকে খুব ভালভাবে প্রাকটিস করতে হবে। এছাড়া অনলাইনে পেইড কোর্স করে শিখতে পারেন। তবে যেই কাজই শিখুননা কেন, আপনাকে খুব ভাল ভাবে শিখতে হবে।
আপনি ৩ মাস থেকে ৬ মাস খুব ভালভাবে কাজ শিখুন। এরপর অনেকগুলি পোর্টফোলিও বানান। এরপর কাজ খোঁজা শুরু করে দিন।
ফ্রিল্যান্সিং করতে কি ইংরেজী জানা লাগে?
যেহেতু বায়াররা ইউরোপ, আমেরিকা বা অন্যান্য দেশের হয়ে থাকে। তাই তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ইংরেজী ভাষা জানার দরকার।
ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা কি কি লাগে
ফ্রিল্যান্সিং করতে প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না। তবে আপনি মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রোফাইল তৈরি করার সময় আপনার সার্টিফিকেট যোগ করে দিতে পারেন। এটা থাকলে দিবেন, না থাকলে দরকার নেই।
ফ্রিল্যান্সিং করে কিভাবে টাকা হাতে পাবো
১. ভালভাবে যেকোন একটি কাজে দক্ষ হতে হবে।
২. এরপর আপনাকে Upwork, Freelancer, Fiverr ইত্যাদিতে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
৩. আপনার প্রোফাইলে আপনার কাজের পোর্টফোলিও যোগ করতে হবে।
৪. এরপর Upwork, Freelancer, People per hour ইত্যাদি মার্কেটপ্লেসে কাজে অ্যাপ্লাই করতে হবে। আর Fiverr এ গিগ খুলতে হবে।
৫. বায়ার আপনাকে কাজে নিলে তা ঘন্টা হিসেবে বা ফিক্সড প্রাইসে কাজ করতে হবে।
৬. এরপর আপনাকে মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা তোলার জন্য আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, Payoneer ইত্যাদি পেমেন্ট মেথড লাগাতে হবে।এজন্য আগে থেকেই আপনার ব্যাংক একাউন্ট সহ অন্যান্য একাউন্ট থাকতে হবে।
৭. আপনি কাজ করে যে টাকা আয় করবেন। তা আপনার ব্যাংক একাউন্ট বা অন্যান্য একাউন্টে ডলার হিসেবে উইথড্র করতে হবে।
৮. এরপর আপনি আপনার আয়কৃত টাকা ডলার থেকে টাকা হিসেবে হাতে পাবেন।
ফ্রিল্যান্সিং করে প্রতিমাসে কত টাকা আয় করা সম্ভব?
মোবাইলে অথবা কম্পিউটারে ফ্রিল্যান্সিং করে প্রতি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা থেকে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। এমনকি এর থেকেও অনেক বেশি আয় করা সম্ভব। আপনি যতই দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে থাকবেন। আপনার আয় ততই বাড়তে থাকবে।
আপনার যদি অনেক কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে। তখন একটা সময় দেখা যাবে যে, আপনার হয়ত বায়ার খুঁজতে হবেনা। আপনার পুরানো বায়ার বার বার আপনার কাছে এসে কাজ করাতে থাকবে। এতে করে আপনাকে কখনোই বসে থাকতে হবে না।
উপসংহার
ফ্রিল্যান্সিং করে কাজ করে খুব সহজেই ঘরে বসে টাকা আয় করা যায়। আপনি চাইলেই আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে খুব সহজে টাকা আয় করতে পারবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে অনেক ভালভাবে কাজ শিখতে হবে। কারণ বায়ার যদি আপনার উপর অসন্তুষ্ট হয়। তাহলে আপনার প্রোফাইল খারাপ হয়ে যেতে পারে। তখন কাজ পেতে অসুবিধা হবে। তাই অনেক বুঝে দেখে কাজ নিতে হবে আর খুব ভালভাবে কাজটি করতে হবে।