আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা রাতে সঠিক সময়ে ঘুমাতে চান না বা ঘুম আসে না। রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় বলতে আমরা বুঝি রাত ১০-১১ টার মধ্যে ঘুমানো। তবে মানুষ নানা কারণে রাতে দেরি করে ঘুমাতে যায়। আর এই রাতে দেরি করে ঘুমালে মানুষের নানা রকমের ক্ষতি হতে পারে।

কেন মানুষ রাতে দেরি করে ঘুমাতে যায়?

১। অনিয়ম ও বদঅভ্যাস এর অন্যতম কারণ। অনেকেই আছে যারা অনেক রাত পর্যত্ন জেগে থাকে। কিন্তু দিনের বেলা আবার সারাদিন ঘুমায়। এতে করে তার ঘুমের সার্কেলের পরিবর্তন হয়। রাতে তখন সহজে ঘুম আসতে চায় না।

২। অনেকে রাত জেগে পড়াশুনা করতে বা কাজ পছন্দ করেন, এটা মোটেও ঠিক নয়। তারা মনে করেন রাতে নিরিবিলিভাবে সব করা যায়। কিন্তু এতে তার ক্ষতিই হয়। রাতের বেলা পড়াশুনা বা কাজ করার থেকে দিনের বা সঠিক সময়ে করা অনেক বেশি উপযোগি।

৩। রাত জেগে মোবাইল টিপা, মোবাইলে গেম খেলার অভ্যাস থাকলে তখন রাত জাগার প্রবণতা বাড়ে।

৪। আবার অনেকে রাত জেগে গল্পের বই পড়ে থাকেন, এটাও রাত জাগার কারণ। আবার অনেকে রাত জেগে মোবাইলে কথা বলে থাকেন, এটাও রাত জাগার কারণ।

৫। অনেকে আবার রাত জাগাকে ফ্যাশন মনে করে। বিশেষ করে শহরের মানুষেররা খুব বেশি দেরি করে ঘুমাতে চায়। কিন্তু তারা এটা জানেনা যে, তারা নিজেরাই নিজেদেরকে তিলে তিলে শেষ করছে।

রাত জাগার কুফলগুলি কি কি?

১। যারা নিয়মিত রাত জাগেন, তাদের মেজাজ সব সময় খিটখিটে থাকে। যার ফলে তারা পরিবার, বন্ধুবান্ধব, কলিগদের কাছে ভাল হতে পারেন না।

২। রাত জাগলে মানুষের কর্মদক্ষতা কমে যায়। যারা অতিরিক্ত জাগে তারা দিনের বেলায় মনোযোগের সহিত কাজকর্ম, পড়াশুনা বা কোন কিছু করতে পারেন না। কারণ সারাদিন তাদের মাথা ঝিমঝিম করে। তারা কোন কিছুতেই মনোযোগি হতে পারেন না।

৩। নিয়িমিত রাত জাগলে চোখের নিচে কালো দাগ হয়।

৪। রাত জাগা থেকে মানুষের দুশ্চিন্তা, টেনশন বাড়ে।

৫। রাত জাগার ফলে মানুষের চুল অনেক বেশি ঝরতে শুরু করে। এছাড়া রাত জাগার ফলে ত্বকে ব্রণ সহ নানা রকমের ক্ষতি হয়।

৬। যারা রাত জাগে তাদের মধ্যে খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। আর তারা খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেন না। যার ফলে তাদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়।

৭। রাত জাগার কারণে মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরা, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, রক্তচাপ বৃদ্ধি, এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

৮। রাত জাগার কারণে মন ভোলা সমস্যা ও দাম্পত্য কলহ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিভাবে রাত জাগা সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব?

১। রুটিনে পরিবর্তন

সবার আগে নিজের সাথে নিজেকে যুদ্ধ করতে হবে। রাতারাতি বা একদিনেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। যেহেতু এটি দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে হয়েছে। তাই প্রতিদিন চেষ্টা করতে হবে ১ ঘন্টা আগে ঘুমাতে যাওয়া। ধরুন আপনি যদি প্রতিদিন রাত ৩ টায় ঘুমাতে যান, তাহলে প্রথম দিন চেষ্টা করতে হবে। ১ ঘন্টা আগে অর্থাৎ রাত ২ টায় ঘুমানো। এভাবে আস্তে আস্তে প্রতিদিন করে রাত ১১ টার মধ্যে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

২। দিনের বেলা না ঘুমানো

কখনোই দিনের বেলা ঘুমানো যাবেনা। যদি খুব বেশি ঘুম আসে তাহলে হাঁটাহাঁটি শুরু করুন। ঘুম কেটে যাবে। এছাড়া চা বা কফি খেতে পারেন। এছাড়া ৫ মিনিট কিছুটা বসে ঘুমিয়ে ঠান্ডা পানির ঝাপটা মারুন। ঘুম ভেঙ্গে যাবে।

৩। ঘুমানোর আগে চা ও কফি না খাওয়া

রাতে ঘুমানোর ৬ ঘন্টা আগে চা বা কফি খাওয়া যাবে না।

৪। রাতের খাবার সঠিক সময়ে খাওয়া

রাতে ঘুমানোর ২ ঘন্টা আগে রাতের খাবার খেতে হবে।

৫। পানি বেশি পান করা

প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ গ্লাস পানি খেতে হবে।

৬। ব্যায়াম করা

ঘুমানোর ১ ঘন্টা আগে ১৫ মিনিট যেকোন ব্যায়াম বা ঘুমের ব্যায়াম করুন।

৭। ৩০ মিনিট হাঁটা

প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।

৮। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

পুষ্টিকর খাবার, শাক সবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ফাস্টফুড, চকলেট, তেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

৯। রাতে মোবাইল না ব্যবহার করা

রাতে ঘুমাতে যাবার অন্তত ৩০ মিনিট পূর্বে মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।