প্রতিটি মানুষই চায়, তার চুল ঘন হোক। আর সেই চুল যদি প্রাকৃতিকভাবে ঘন করার উপায় জানা থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই। নানা কারণে আমাদের মাথার চুল পড়তে শুরু করে। আর এই চুল পড়তে পড়তে একসময় অনেকের টাক হয়ে যায়। আবার অনেকের চুল একেবারে টাক হয়ে যায়। চুল কম থাকলে দেখতেও খুব বাজে দেখায়। কারণ চুলই মানুষের আসল সৌন্দর্য। যার চুল পাতলা, তাকে কখনোই দেখতে ভাল লাগে না। শুধু তাই নয় টাক হয়ে গেলে মানুষের নিজের উপর ভরসাও কমে যায়।

কি কি কারণে চুল পড়ে যায় বা পাতলা হয়ে যায়?

১। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের চুল এমনিতেই পড়ে যায়। সাধারণত একটি মানুষের বয়স ২৫ বছর পার করলেই চুল পড়া শুরু করে। এছাড়া ৩৫-৪০ বছরের পার হলে চুল পড়ার গতি আরো বেড়ে যায়। তবে এই চুল পড়া সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

২। নিয়মিত মাথার চুল পরিষ্কারের অভাবে ও নিম্নমানের শ্যাম্পু ব্যবহারে মাথার ডানড্রফ থেকে চুল পড়া বাড়ে।

৩। ময়লা আবহাওয়া যুক্ত পরিবেশ চুল পড়ার জন্য দায়ী।

৪। চুলে অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে চুল পড়া বাড়ে।

৫। অতিরিক্ত টেনশন থেকে চুল পড়া বাড়ে।

৬। ভেজা চুল বেশি বেশি আচরানোর কারণে চুল পড়া বেশি হয়।

৭। চুলে অতিরিক্ত স্টাইলিং পন্য যেমন জেল, ক্রিম ব্যবহারে চুল পড়া বাড়ে।

৮। চুলে হেয়ার ড্রায়ার, হেয়ার স্ট্রেইটনার বেশি বেশি ব্যবহারে চুল ঝরতে শুরু করে।

৯। চুলে ক্ষতিকর ব্লিচিং ও কালার করালে চুল পড়া অতিরিক্ত হারে শুরু করতে পারে।

১০। অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, রাতজাগা, কম ঘুমানো, পানি কম খাওয়া ইত্যাদি কারণে চুল পড়া বাড়ে।

১১। অতিরিক্ত ক্ষতিকর উপাদান যুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারে চুল পড়ার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

১২। চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতিতে চুল পড়া বেড়ে যায়।

১৩। অতিরিক্ত ধুমপানের ফলে চুল পড়া শুরু করতে পারে।

১৪। বংশপগত কারণে চুল পড়া অত্যধিক হারে শুরু করে।

কি কি উপায়ে পাতলা চুল ঘন করা যায়?

১। অলিভ ওয়েল, ক্যাস্টার ওয়েল, নারিকেল তেল, অ্যালমন্ড ওয়েল

অলিভ ওয়েল, ক্যাস্টার ওয়েল, নারিকেল তেল, অ্যালমন্ড ওয়েল ও লেবু প্রতিটি ১ চামচ করে নিয়ে এই তেলটি গোসলের ১ ঘন্টা আগে মাথার স্ক্যাল্পে ও চুলে ভালভাবে মাখতে হবে। লেবু চুলের ভেতরের ডানড্রফ দূর করে। এরপর গোসলের সময় কোন প্রাকৃতিক শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করলে রাতারাতি চুল ঘন হবে ও নতুন চুল গজাবে। মাত্র ১ মাসের ভেতরই ফলাফল দেখা যাবে।

২। নারিকেল তেল ও পেয়াজের রস

৩ চামচ নারিকেল তেল, ১ চামচ পেয়াজের রস ও ১ চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে খুব ভাল করে পেস্ট করে নিতে হবে। এই পেস্টটি সমস্ত মাথার চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ৩ দিন করতে হবে। পেয়াজের রস নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

৩। অলিভ ওয়েল ও ডিমের সাদা অংশ

২ চামচ অলিভ অয়েল ও ১ টি ডিমের সাদা অংশ একসাথে মিশিয়ে তেলটি মাথার স্ক্যাল্পে ও চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ভাল শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে চুল পরিষ্কার করে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ১ দিন করলে চুল ২ মাসের ভেতরেরি ঘন হতে শুরু করে করবে।

চুল ঘন করতে কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?

১। নিয়িমিত প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে। কমপক্ষে ১২ গ্লাস।

২। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।

৩। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ ওজন বৃদ্ধি চুল পড়ার কারণ।

৪। ধুমপান করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

৫। ক্ষতিকর উপাদান যুক্ত নিম্নমানের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার ত্যাগ করতে হবে।

৬। চুলে বিভিন্ন স্টাইলিং পন্য, হেয়ার ড্রায়ার, হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

৭। ভেজা চুল আচরানো যাবে না।

৮। চুল পড়া অতিরিক্ত হলে ও কোন কিছুতেই কাজ না হলে ডাক্তারের স্বরণাপন্য হতে হবে।

চুল পড়া রোধে কি কি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে?

চুল পড়া রোধে প্রোটিন, বায়োটিন, আয়রণ, ভিটামিন সি, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি১২, ফলিক এসিড ও ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেতে হবে। এর জন্য ডিম, মুরগির ব্রেস্ট, ডাল, বাদাম, কলা, টমেটো, গরুর কলিজা, পালং শাক, বেদানা, পেয়ারা, লেবু, ক্যাপসিকাম, মশুর ডাল, পেপে, মিষ্টি আলু, লাউ, গাজর এই খবারগুলি বেশি করে খেতে হবে।