পৃথীবিতে ফ্রিল্যান্সিং খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ যেকেউ চাইলেই ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। আপনি চাইলে মোবাইল দিয়েই আপনার বায়ার খোঁজার কাজ করতে পারেন। আবার বায়ারের সাথে যোগাযোগ রাখার কাজ মোবাইল দিয়েই করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং কি?

ফ্রিল্যান্সিং বলতে সোজা কথায় বলা যায়, ফ্রিভাবে কাজ করা। অর্থাৎ এটি একটি মুক্ত পেশা। যেকেউ চাইলেই এটি করতে পারে। এর জন্য দরকার নেই কোন প্রকার সার্টিফিকেট। আপনি যদি ভাল কাজ পারেন। তাহলে আপনি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েও এটি করতে পারবেন। তবে এটি করতে অবশ্যই যেকোন একটি কাজে দক্ষ হতে হয়।

এটি করতে কি কি লাগে?

১। একটি মোটামুটি মানের কম্পিউটার

২। অনলাইনে চাহিদা আছে এরকম যেকোন কাজে ভাল দক্ষতা। যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এস ই ও, ভিডিও এডিটিং, টাইপিং, ডাটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি।

৩। মোটামুটি খুব ভালভাবে ইংরেজীতে লিখতে পারা ও মোটামুটি বলতে পারা।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শিখতে হয়?

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শেখার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি কাজ পছন্দ করতে হবে। এরপর সেই কাজ রিলেটেড বিভিন্ন ব্লগ অনলাইনে পড়তে হবে ও ধারণা নিতে হবে। এরপর সেই কাজ রিলেটেড বিভিন্ন ভিডিও ইউটিউব থেকে শিখতে হবে। আপনি চাইলে সেই কাজের উপর অনলাইনে কোর্স করতে পারেন। যেটাতে কিছুটা টকা লাগবে। তবে ইউটিউব দেখে কাজ শিখলে কোন টাকা লাগবে না। এছাড়া আপনি যেকোন আইটি সেন্টার থেকেও এই কাজ শিখতে পারেন। আবার সরকারীভাবেও আপনি বিনামূল্যে কাজ শিখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনি একটি সরকারী সার্টিফিকেটও পাবেন। সাধারণত ভালভাবে কাজ শিখতে আপনার ৩ থেকে ৬ মাস লাগবে। আর আপনাকে প্রচুর পরিমাণ চর্চা করতে হবে।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হয়?

যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। আর যাদের কাজ করা হয় তাদেরকে বলা হয় বায়ার বা ক্লাইন্ট। অর্থাৎ আপনাকে বায়ারের কাজ করতে হবে। আপনাকে বায়ার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একট কাজ করতে বলবে। আর আপনাকে সেই সময়ের মধ্যে সেই কাজটি করে দিতে হবে। কাজ শেষ হলেই বায়ার আপনাকে টাকা দিবে। সেই টাকার পরিমাণ বাংলাদেশি টকায় অনেকে হয়ে থাকে। যেমনঃ আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনের কোন কাজ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে আপনি একটি কাজের জন্য কমপক্ষে ৫০০ ডলার থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। আর আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করে থাকেন। সেক্ষত্রে আপনি ৩০০ ডলার থেকে ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন।

কেন বায়ার আপনাকে বেশি টাকা দিয়ে থাকে?

এভাবে আপনি বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন। আবার কোন বায়ারের যদি আপনার কাজ খুবই ভাল লেগে যায়। সেক্ষত্রে আপনি সেই বায়ারের কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে হাজার হাজার ডলার আয় করতে পারবেন। অনেক বায়ার আছে, যারা তাদের পছন্দের ফ্রিল্যান্সার দিয়ে বছরের পর বছর ধরে কাজ করাতে থাকেন। যেহেতু বেশিরভাগ বায়ারদের বাড়ি আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য এই সকল দেশ হয়ে থাকে। আর তাদের কাছে ৫০০ ডলার বা ১ হাজার ডলার তেমন কোন টাকাই হয় না। কিন্তু বাংলাদেশিদের কাছে সেই টাকা অনেক টাকা হয়ে থাকে। অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে যারা মাত্র ১ থেকে ২ বছর কাজ করেই কোটিপতি হয়ে যায়। তবে এর জন্য আপনাকে আপনার কাজে অনেক দক্ষ হতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কিভাবে কাজ পেতে হয়?

এই কাজ করার জন্য আপনাকে প্রথমে যেকোন একটি মার্কেটপ্লেসে যেতে হবে। পৃথীবির সবথেকে ভাল মার্কেটপ্লেস হল আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডট কম ও ফাইভার।

আপওয়ার্কে এ যেভাবে কাজ পেতে হয়

আপওয়ার্কে এ কাজ করতে হলে প্রথমে আপনাকে এখানে একটি প্রোফাইল খুলতে হবে। এরপর আপনি কি কি কাজ পারেন তা দিতে হবে ও আপনার সম্বন্ধে একটি ওভারভিউ লিখতে হবে। এছাড়া আপনি যে ভাল কাজ পারেন তার পোর্টফেলিও তৈরি করতে হবে। এরপর আপনি যে কাজ কাজ পারেন, সেই কাজের জন্য সার্চ করতে হবে। সার্চ করার কাজের মধ্যে আপনি যেই কাজ পারেন সেই কাজে অ্যাপ্লাই করতে হবে।

বায়ারকে জানাতে হবে যে আপনি সেই কাজ পারেন। এরপর বায়ার আপনাকে পছন্দ করলে আপনাকে কাজে নিয়ে নিবে। বায়ার আপনাকে ২ ভাবে নিতে পারে। ফিক্সড প্রাইজ হিসেবে বা প্রতি ঘন্টা হিসেবে। ফিক্সড প্রাইজ হিসেবে নিলে আপনি কাজ শেষ করলেই টাকা পারেন। আর প্রতি ঘন্টা হিসেবে নিলে আপনি কাজ করতে করতে প্রতি ঘন্টাতেই টাকা পেতে থাকবেন। এই টাকা আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সার ডট কমে এ যেভাবে কাজ পেতে হয়

ফ্রিল্যান্সার ডট কম প্রায় সম্পূর্ণ আপওয়ার্কের এর মতই। তবে এখানে কাজের রেট আপওয়ার্ক থেকে কিছুটা কম। আপনি চাইলে এই খান থেকেও কাজ করে টাকা আয় করতে পারবেন।

ফাইভারে এ যেভাবে কাজ পেতে হয়

ফাইভার এ কাজ করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। এরপর যেই কাজ পারেন, সেই কাজের জন্য আপনাকে আপনাকে সকল কিছু লিখে একটি গিগ তৈরি করতে হবে। আপনি যে কাজ পারেন সেই কাজের বর্ণনা দিতে হবে। এছাড়া কাজের জন্য টাকার পরিমাণ দিতে হবে। কবে সেই ডেলিভারি দিয়ে দিবেন, কাজের পোর্টফোলিও এই গুলি একটি প্রফাইল আকারের সেট করতে হবে। এই প্রক্রিয়াকেই গিগ বলে। আপনাকে কোন কাজে এখানে অ্যাপ্লাই করতে হবে না। কোন বায়ার আপনার এই গিগ পছন্দ করলে আপনাকে কাজে নিবে, কাজ শেষে আপনাকে টাকা দিবে। এই মার্কেটপ্লেস থেকেও আপনি অনেক পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন।

এভাবে যেকেউ ঘরে বসে কাজ শিখে এই মার্কেটপ্লেসগুলিতে কাজ করতে পারেন। আর মাসে হাজার হাজার ডলার আয় করতে পারবেন। এটা একেবারেও পরীক্ষিত সত্য।